বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচি

বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচির জন্য এক বছরে ছয় কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছাড় করা হয়েছে দুই কোটি ছয় লাখ ১৮ হাজার টাকা। জাতীয় সংসদে ৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপস্থাপিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা: হালচিত্র ২০১৪‘ পুস্তিকায় দেখা যায়, আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে চার কোটি ৬৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচির পরিচালক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের যুগ্ম প্রধান কামরুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসূচিটি নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।
এক বছর মেয়াদি এ কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৬৪ জেলার ২৭৬ উপজেলার ১২ হাজার ৪২০ জন নারীকে। প্রতি উপজেলার ৪৫ জন নারী পাবেন এ সুযোগ।
প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি তদারক দল গঠিত হয়েছে। তিন মাস পর পর দলটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।’ কামরুন্নাহার বলেন, প্রশিক্ষণের পর আগ্রহীদের ল্যাপটপ কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের জন্য টিএমএসএসের সঙ্গে গত ২৯ এপ্রিল সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বেসিক ও অ্যাডভান্সড-এ দুই ধাপে। প্রশিক্ষণের বিষয় তিনটি-গ্রাফিকস ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। বেসিকে যাঁরা ভালো করবেন তাঁদেরই দেওয়া হবে অ্যাডভান্সড প্রশিক্ষণ। গ্রাফিকস ডিজাইনের প্রশিক্ষণ থাকলে ইমেজের মাধ্যমে ছবি সম্পাদনা, লোগো তৈরি, অ্যানিমেশন ইত্যাদি কাজ করা যায়। আর কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজের প্রচার বৃদ্ধির কৌশল শিক্ষা দেয় এসইও। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণ সহায়তা করে কোনো ওয়েবসাইট তৈরিতে।

দেশের তৃণমূল পর্যায়ের এ রকম নারীদের কথা মাথায় রেখে ‘বাড়ি বসে বড়লোক’ নামক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। যার আওতায় আউটসোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে বসেই উপার্জন করা যাবে সম্মানজনক অর্থ।

টিএমএসএসের দিক থেকে গোটা বিষয়টি দেখভাল করছেন সংস্থাটির পরিচালক (আইসিটি) নিগার সুলতানা। প্রথম আলোকে তিনি জানান, তাঁদের দক্ষ সাতজন প্রশিক্ষক বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘুরে ঘুরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষিত অনেকে আয় করাও শুরু করেছেন।

ছোট ছোট প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন বড় প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর। প্রথম আলোকে তিনি জানান, ‘আউটসোর্সিংয়ের বর্তমানের বিশ্ববাজার ১০০ কোটি ডলারের। এ থেকে বাংলাদেশ কাজ পাচ্ছে মাত্র দুই কোটি ডলারের।’ ২০১৮ সালের মধ্যে এ বাজার ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার আশাবাদ করে তিনি বলেন, এ খাত থেকে ভালো আয় করতে ভালো প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

আউটসোর্সিং : একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ ওই প্রতিষ্ঠান নিজে না করে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেওয়াকে আউটসোর্সিং বলে। আর মুক্ত পেশাজীবী হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানটির কোনো কাজ করে দেন।

একজন ব্যক্তি তাঁর পুরোনো বই নতুন করে টাইপ করতে চান, কোনো কোম্পানি কয়েক বছরের হিসাবকে এক জায়গায় আনতে চায়, অথবা নতুন কোনো কোম্পানির ওয়েবসাইট বা লোগো তৈরি করতে চায়-মূলত এসব কাজই খুঁজে থাকেন মুক্ত পেশাজীবীরা। উন্নত দেশগুলোতে এসব কাজ করার মতো অনেকের সময় থাকে না। অথবা নিজের দেশের কাউকে দিয়ে করাতে চাইলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর এ কারণেই আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টি দিন দিন সামনে চলে এসেছে।
গোটা প্রক্রিয়াটিই অনলাইনভিত্তিক। একটি কাজ করে দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাউকে খুঁজছে বলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়। সেই কাজগুলোই অর্থের বিনিময়ে করে দেন মুক্ত পেশাজীবীরা। আগ্রহীরা ই-মেইলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জেনে নেন কত ঘণ্টা বা কত দিনের কাজ। তার পর, কাজ যিনি দেবেন তাঁর পক্ষ থেকে একটি দরপত্র (বিড) ডাকা হয়। অনেকেই অংশ নিতে পারেন এতে। সবচেয়ে কমে যিনি করে দিতে পারবেন বলে জানান, তিনিই পেয়ে যান কাজ। তবে চূড়ান্তভাবে কাজ দেওয়ার আগে সাধারণত স্কাইপেতে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

কর্মসংস্থান ও আয় : বাংলাদেশে কতজন মুক্ত পেশাজীবী রয়েছেন-এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই। ইল্যান্স ডট কম এবং ওডেস্ক ডট কম নামক দুটি প্রতিষ্ঠানেই সবচেয়ে বেশি কাজ খোঁজেন মুক্ত পেশাজীবীরা। সম্প্রতি রূপসী বাংলা হোটেলে ইল্যান্স-ওডেস্ক আয়োজিত এক সেমিনারে ‘অনলাইনভিত্তিক কাজের বিপ্লব: বাংলাদেশি মুক্ত পেশাজীবীদের ভূমিকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে জানানো হয়, গত মার্চ পর্যন্ত ইল্যান্স-ওডেস্কে তিন লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ জন মুক্ত পেশাজীবী কাজ পেতে নিবন্ধন করেছেন।
ফ্রিল্যান্সার ডট কম নামক ঠিকানায় আরও এক লাখের মতো নিবন্ধন হয়ে থাকতে পারে বলে জানান ইল্যান্স-ওডেস্কের আবাসিক ব্যবস্থাপক সাইদুর মামুন খান। তিনি জানান, সব মিলিয়ে নিবন্ধিত মুক্ত পেশাজীবী হতে পারেন পাঁচ লাখ৷ তবে এর মধ্যে সিক্রয় রয়েছেন মাত্র এক লাখের মতো।

প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০১২ সালে এ সংখ্যা দুই লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ জন থাকলেও ২০১৩ সালে তা ৫০ শতাংশ বেড়ে হয় তিন লাখ ৬২ হাজার ৯৪৮ জন।
২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সোয়া চার বছরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আয় করেছে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

২০১২ সালের আয় এক কোটি ৫৬ লাখ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২০১৩ সালে এ আয় দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার হয়েছে বলে প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।
এতে আরও জানানো হয়, সোয়া চার বছরে সবচেয়ে বেশি তিন কোটি ২৪ লাখ ৬২ হাজার ডলার আয় হয়েছে আইটি ও প্রোগ্রামিং শ্রেণি থেকে।

অ্যাডমিন সাপোর্ট থেকে ৭২ লাখ ১৪ হাজার, বিক্রয় ও বিপণন থেকে ৫৫ লাখ ৭০ হাজার,

ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া থেকে ৪০ লাখ,

লেখা ও অনুবাদ থেকে ২৩ লাখ,

ফিন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে আট লাখ ৭০ হাজার,

ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং থেকে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার,

অন্যান্য শ্রেণি থেকে তিন লাখ ৪৮ হাজার এবং

সবচেয়ে কম লিগ্যাল শ্রেণি থেকে ১২ হাজার ডলার আয় হয়েছে।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছয় কোটি ৭০ লাখ টাকা
আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ চার কোটি ৬৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা

২৭৬ উপজেলার সাড়ে ১২ হাজার নারী প্রশিক্ষণ পাবেন
‘‘কর্মসূচিটি নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি তদারক দল গঠিত হয়েছে। তিন মাস পর পর দলটি প্রতিবেদন তৈরি করবে
কামরুন্নাহার
কর্মসূচি পরিচালক
প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তিনটি বিষয়ে-গ্রাফিকস ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)