আমিরের উদ্ভাবিত অটোব্রিকস মেশিন যাচ্ছে বিদেশে

যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন। কোনো কারিগরি শিাপ্রতিষ্ঠান বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। স্বশিতি প্রকৌশলী তিনি। তার উদ্ভাবিত যন্ত্র এখন দেশের কৃষিক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার। তার উদ্ভাবিত স্বল্পমূল্যের মিনি অটোব্রিকস মেশিন এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশে। স্বল্পশিতি আমির হোসেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সেখানকার রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক। ইতঃপূর্বে তিনি কৃষিকাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবন করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। অটোমেটিক পদ্ধতিতে ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করে আবারো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন তিনি। আমির হোসেন জানান, আধুনিক মডেলের এই মেশিন সহজে স্থানান্তর করা যায়। মেশিনটি রাখতে ৬ ফুট বাই ২২ ফুট জায়গা লাগে। জনবল লাগে ১০ জন। এ মেশিন থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১২ শ’ ইট তৈরি করা যায়। ইলেকট্রিক ও ডিজেল দুই পদ্ধতিতে এই মেশিন চলে। ৩৫ হর্সের একটি ডিজেল শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে চলে এবং প্রতি ঘণ্টায় দেড় লিটার ডিজেল লাগে। তিনটি মেশিন সংযোগ করলে সম্পূর্ণ ইটভাটা চলে। কম খরচে স্বল্প জনবলে এ মেশিনে ইট উৎপাদন হওয়ায় ভাটামালিকদের কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও ভুটানে রফতানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো অনেক দেশে এ মেশিন রফতানি হবে এমন প্রত্যাশা তার। আমির হোসেন কোনো প্রযুক্তি একবার দেখেই তা তৈরি করে ফেলেন। তাই নিত্যনতুন মেশিন আবিষ্কার করেই চলেছেন তিনি। দেশী প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিযন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রেলগাড়ি, ইটভাঙা মেশিন, সেমাই তৈরি মেশিন, ফিশ ফিড, পোলট্রি ফিড, গো-খাদ্য অটোমেশিন, মিকচার মেশিন, ভুট্টা মাড়াই ও ভাঙানো মেশিন, শুঁটকি মাছ, ঝিনুক, খৈল ক্রাশার মেশিন, সিলিকন ভাঙা অটোমেশিন, জৈব মিশ্র সার তৈরি সেমি অটোমেশিন ও প্লাসটিক পাইপ তৈরির মেশিন উদ্ভাবন করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন তিনি। এ ছাড়া তার আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে বরই, আদা, রসুন, মরিচ ও সস তৈরির অটো ক্রাশার মেশিন; আম, আনারস, টমেটো, কমলা লেবু ক্রাশার মেশিন; ড্রাম সিডার চাষ ছাড়াই বীজ বপনের যন্ত্র, শস্য মাড়াই ও ধান কাটা মেশিন। এ ছাড়া বিনোদন পার্কে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তিনি তৈরি করে আলোচিত হয়েছেন। সর্বশেষ সয়াবিন ও পাটের আঁশ ছাড়ানোর মেশিন তৈরি করেছেন তিনি। জানা গেছে, বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার ঠিকাদারপাড়া লেনের ধলু মেকার প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন ১৯৪০ সালে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তৎকালীন বগুড়ার ডিসির নির্দেশে ধলু মেকার সতর্কতামূলক ‘সাইরেন মেশিন’ তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এ ধলু মেকার নিজেই হস্তচালিত লেদ মেশিন তৈরি করে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে আলোচনায় আসেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৩ নভেম্বর মারা যাওয়ার পর রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের দায়িত্ব নেন তার ছেলে আমির হোসেন। ধুলু মেকারের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে আমির হোসেন চতুর্থ। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। শুরু হয় বিভিন্ন মেশিন তৈরির পরিকল্পনা। উদ্ভাবক আমির হোসেন ২০০৩ সালে বুয়েট থেকে বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ও জিটিজেড থেকে কৃষিসামগ্রী উদ্ভাবনের ওপর প্রশিণ নেন। এ কাজে আমির হোসেনকে সাহায্য করেন তার দ্বিতীয় মেয়ে আসমা খানম আশা ও তৃতীয় মেয়ে তাহিয়া খানম। আমিরের মেয়ে আসমা খানম আশা বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পদকও পেয়েছেন। আমির হোসেন পাথর ভাঙার তুফান মেশিন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। একের পর এক আবিষ্কার তাকে নিয়ে গেছে অনেক উচ্চাসনে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন আবিষ্কারের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। এতে তিনি আরো উৎসাহিত হয়ে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারে সম হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এসব উদ্ভাবনের জন্য তিনি জাতীয়ভাবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদ বগুড়া অফিস: নয়া দিগন্ত  ১৩.১০.১৩


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)