সম্পদের সঠিক ব্যবহার

সম্পদের সঠিক ব্যবহারঃ সময়ের দাবী

দেশের মৌলিক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা। আর দেশের উন্নয়নে প্রয়োজন দেশে বর্তমান / বিরাজমান সম্পদের সঠিক ব্যবহার। সম্পদের সঠিক ব্যবহার - একটি ব্যপক অর্থবোধক বাক্য। সম্পদ বলতে জমি, পানি, মানব, খনিজ, শ্রম ও মেধা সম্পদ এবং দলমত নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের মধ্যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সৌহার্দ্যকেও বুঝায়।

ভূ-সম্পদঃ
ভূমির বা জমির সঠিক ব্যবহার না হলে একদিকে খাদ্য পণ্যের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্য দিকে আবাসিক বা বানিজ্যিক কারনে অধিক হারে ফসলের জমি কমে যাবে। পতিত জমি কোন উৎপাদন দেয় না বরং খরচ বাড়ায়।

পানি সম্পদঃ
পানি সম্পদের সঠিক ব্যবহার না হলে প্রত্যক্ষ ইতিবাচক ভাবে ফসল ফলান, মাছ চাষ, পরিবহন সুযোগ হারাব অন্য দিকে পরোক্ষ ভাবে পানি দূষিত হয়ে রোগ বালাই সৃষ্টি করে, অনিয়ন্ত্রত পানি বন্যা-প্লাবন সৃষ্টি করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

উদ্ভিজ্য সম্পদঃ
উদ্ভিজ্য সম্পদ আমাদের খাদ্য, পুষ্টি, জ্বালানী, আসবাবপত্র, ছায়া, অক্সিজেন, বায়ু-ঢেউ জনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দেয়। এর ক্ষতি সাধন করলে এ সকল নিরাপত্তা হতে দেশ বঞ্চিত হবে।

মানবসম্পদঃ
মানবসম্পদ বর্তমান বিশ্বে একটি প্রত্যাশিত সম্পদ- এটি এখন আর কোন বোঝা নয়। বিশ্বায়নের এই সময়ে বিশ্বে দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রয়োজন শুধু প্রতিটি মানব সন্তানকে সুস্থ-সবল-দক্ষ-নৈতিক মান সম্পন্ন সম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা। কর্মমুখী মানুষের পিছনে বাড়তি খরচ অলস মানুষের চেয়ে কম।প্রতিটি মানুষকে উপার্জনক্ষম মানুষরুপে গড়ে তুলতে পারলে দেশে আর্থিক ঘাটতির বদলে সঞ্চয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
নৈতিক মান সম্পন্ন মানব সম্পদ প্রয়োজন এ জন্যে যে, অনৈতিক মান সম্পন্ন মানুষ সমাজের বোঝা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি সাধনকারী, অপচয়কারী এবং অপচয়ের কারণ সৃষ্টিকারী। যেমন, ঘুষখোর, নেশাখোর, চোর-ডাকাত, দুচ্চরিত্রের লোক, কুটবুদ্ধির লোক ইত্যাদি।

মেধা সম্পদঃ
মেধা সম্পদ বর্তমান উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আশীর্বাদ। এই মেধা শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক এবং বহুমাত্রিক। মেধা প্রয়োজন উৎপাদনে, মেধা প্রয়োজন প্রশাসনে, মেধা প্রয়োজন বানিজ্যে, মেধা প্রয়োজন প্রশিক্ষণ খাতে, মেধা প্রয়োজন অবস্তুগত সেবা যেমন- কৌশলী, প্রকৌশলী, চিকিৎসা প্রভৃতি খাতে। বর্তমানে মেধার সবচেয়ে বড় প্রয়োগ প্রযুক্তিগত খাতে। যেখানে মেধার মূল্য বস্তুগত খাতের তুলনায় হাজার গুণ বেশী লাভজনক।

আমরা বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছি বিদেশে পণ্য রপ্তানী করে, বিদেশে অদক্ষ শ্রম বিক্রয় করে , বিদেশে দক্ষ শ্রম বিক্রয় করে । পণ্য রপ্তানী করে যে আয় হয় সেটি মূলত কোন লাভজনক আয় নয় বরং বলা যায় পণ্যের বিনিময়ে ডলার সংগ্রহ করা অন্য পণ্য আমদানী করার জন্য। কিন্তু মেধা বিক্রয় করে যে আয় তাতে বলতে গেলে কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। (অর্থাৎ শিক্ষা খাতে ব্যয়কে সবার জন্য জাতীয় ব্যয় বিবেচনা করা হল - সকল নাগরিক তার ইচ্ছা মাফিক প্রশিক্ষণ নিতে পারবে সরকারী ব্যবস্থাপনায়। )

মেধার বিপনন:
এবার আসা যাক মেধার বিপনন। এর বিভিন্ন দিক আছে যেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা আয় সম্ভব।
আইটি খাতঃ এ খাত হতে বাংলাদেশে বসেই কোটি কোটি ডলার আয় করা সম্ভব এবং বাংলাদেশী ছেলেরা তা করে দেখাচ্ছেও । গত অর্থবছরে আইটি খাত দেশে অর্থ এনেছে সরকারী হিসিবে ১,০০০ কোটি টাকার উপর। এর বাইরেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা যেটা ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষুদ্র আয় যা সরকারী রেকর্ডভুক্ত নয়। ওডেক্স, ইল্যান্স, ইবেসহ আরও অনেক মার্কেট প্লেসে কাজ করে আমাদের ছেলেরা প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছে। মাথাপিছু আয় খুব বেশী না হলেও মাথার সংখ্যা অনেক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষুদ্র আয়টিও বিদেশে শ্রম বিক্রয়ে প্রাপ্ত আয়ের চেয়ে বেশী। আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করলে অল্প দিনের মধ্যেই স্বল্প মেয়াদী সামান্য বিনিয়োগে নতুন কোন স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াই প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অল্প দিনের মধ্যেই স্বল্প মেয়াদী সামান্য বিনিয়োগ বললাম এ জন্য যে, প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ খাতে যে খরচ হবে তা প্রশিক্ষণ শেষে আয় থেকে সমন্বয় করা যাবে খুব সহজেই।

এ খাতের কতকগুলো ইতিবাচক দিক হল -
অন্যান্য বস্তুগত উৎপাদনশীল খাতে যেমন জমি, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদির প্রয়োজন হয় - এ খাতে তার কিছুই দরকার হয়না। বস্তুগত উৎপাদনশীল খাতে ব্যবসা লাভজনক না হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় -এ খাতে তার কিছুই হয়না। আইটি সম্পর্কিত খাতে আয় বৃদ্ধিতে প্রতিটি বাসস্থানই হয়ে উঠে এক একটি অফিস/কর্মক্ষেত্র - যে কর্মক্ষেত্রের অফিস আওয়ার হল চব্বিশ ঘন্টা ৩৬৫ দিন, নিয়মিত খরচ হল বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।

এ খাতে কাজ করার আর একটি সুবিধা হল সব ধরণের মেধা বিনিয়োগ করা যায় এখানে। অর্থাৎ ছোট কাজ থেকে আরম্ভ করে অতি উচ্চমানের প্রযুক্তিগত কাজ করা যায় একই ব্যবস্থাপনার অধীনে এবং কর্মী তার মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার সুযোগ পা্য় এবং দ্রুত এ উন্নয়ন ঘটাতে পারে - বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় না।

অর্থ সম্পদের ব্যবহারঃ
কৃষি, পশুপালন, মৎস চাষ, শিল্পকারখানা উন্নয়নে অর্থ বিনিয়োগ করে দেশ লাভবান হতে পারে এবং এগুলো একটি দেশের অর্থের মৌলিক প্রয়োগ। এর বাইরে অর্থের একটি লাভজনক প্রয়োগ হতে পারে বৈদেশক বাণিজ্যে অর্থাৎ দেশের অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করে দেশের সম্পদ ব্যবহার ছাড়াই বিদেশ থেকে আয় করা। এ ক্ষেত্রে প্রচুর ক্ষেত্র রয়েছে যার কতকগুলোতে দরকার দক্ষ ব্যবস্থাপনা, দক্ষ বাজারজাতকরণ পদ্ধতি। আবার কতকগুলো খাত আছে যেখানে স্বল্প পুজি, সামান্য দক্ষতা এবং তাও ব্যক্তি পর্যায়ে হলেও চলে - যেমন কারন্সি ট্রেডিং।

চাষঃ
আফ্রিকান দেশগুলোতে চাষাবাদ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে যা ব্যক্তি পর্যায়ে করাও যায় আবার সরকারী উদ্যোগে করাও যায়।

শিল্প প্রতিষ্ঠানঃ
উন্নত বিশ্বের দেশগুলো আমাদের মত উন্নয়ণশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন শিল্পোন্নয়ণে অর্থ এবং প্রযুক্তি বিনিয়োগ করে। সামর্থ অর্জন করলে আমাদের পক্ষেও অনুরুপ কার্যক্রম হাতে নেয়া সম্ভব।

ব্যবসাঃ
ব্যক্তি ও সরকারী উদ্যোগে দেশের বাইরে ছেট বড় বিভিন্ন মানের ব্যবসা পরিচালনা করে বিদেশে বসে আয় করা সম্ভব।

কারেন্সি ট্রেডিং
ঘরে বসেই কারেন্সি ব্যবসা করা যায়। সামান্য পুজি, সামান্য দক্ষতা এবং তাও ব্যক্তি পর্যায়ে হলেও চলে কারেন্সি ব্যবসা। কারেন্সি ব্যবসা অন্য যে কোন ব্যবসার চেয়ে সহজ - পার্থক্য শুধু আর্ন্তজাতিক মার্কেট এবং ভাষা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হয়। অন্য যে কোন ব্যবসায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে যে পরিমান সময়, শ্রম ও পুজি বিনিয়োগ করতে হয় কারেন্সি ব্যবসায়ে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তার চেয়ে অনেক কম সময়, শ্রম ও পুজি বিনিয়োগ করে অনেক বেশী মুনাফা অর্জন করতে পারে।

- এম. এইচ. জাহিদ
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পক


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)