হেফাজতের সমাবেশে ১৩ দফা

শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৩
স্টাফ রিপোর্টার: হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশে ১৩ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রের ধারাগুলো হলো-
১। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বর্জন করে ধর্মের শাশ্বত সৌন্দর্যের প্রতি প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২। ভবিষ্যতে সব রকম ইসলাম অবমাননার দুঃসাহস বন্ধ করার স্বার্থেই আগ্রাসী নাস্তিক্যবাদ, ধর্মদ্রোহ ও ইসলাম অবমাননার কোনও ঘটনাই বিনা বিচারে ও বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়ার কোনও অবকাশ থাকতে পারে না। সেজন্যই জঘন্য ইসলাম বিদ্বেষের গুরুতর অপরাধে শাহবাগ আন্দোলনের সংগঠক ও নেতৃত্বদানকারী চিহ্নিত নাস্তিক মুরতাদদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। ইসলামের অবমাননার মধ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের উস্কানি সৃষ্টির সব রকম উপায় বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ইসলাম অবমাননার যে কোনও রকম অপতৎপরতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আল্লাহ, রাসূল, কোরআন ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচাররোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৪। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আল্লাহ-বিশ্বাসী ও রাসূল প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। সে কারণেই আল্লাহ-রাসূলের সম্মানহানির চলমান জঘন্য প্রয়াসের বিরুদ্ধে দাবি ও প্রতিবাদ নিয়ে বিক্ষোভ অংশগ্রহণকারী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তাওহিদী জনতার ওপর সব রকম হামলা-মামলা, দমন-নিপীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে। চলমান আন্দোলনে সরকারের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকার পক্ষীয় সন্ত্রাসী দুস্কৃতিকারীকর্তৃক গুলিবর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাকা-ের কঠোর বিচার করতে হবে।
৫। ধর্মীয় অধিকার রক্ষার চেষ্টার কারণে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় আয়োজনে কষ্ট দেয়ার সব নিন্দনীয় চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। সে কারণেই ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলন-বিক্ষোভে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তাওহিদী জনতাকে মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৬। পৃথিবীর কোনও মসজিদেই নামাজ, ইবাদত, দোয়া করতে কোনও রকম বাধা দেয়া হয় না। মুসলিম প্রধান দেশে তো এমন প্রতিবন্ধকতার কথা কল্পনাও করা যায় না। অথচ এদেশের জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়ে সরকারি উদ্যোগে বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সব মসজিদে নামাজসহ ইবাদত, আমল, ওয়াজ নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সব ধরণের বাধা প্রদানের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
৭। মুসলমানদের জন্য তাদের নিজস্ব মূল্যবোধ সংস্কৃতিই অনুসরণীয়। অপসংস্কৃতিতে একাত্ম হওয়ার সুযোগ তাদের নেই। তাই ব্যাক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে সব ধরণের ধর্মদ্রোহ, চিন্তা ও আচরণগত অনাচার, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ব্যভিচার, জাতীয় পর্যায়ে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোসহ অপসংস্কৃতি, বিজাতীয় ও ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৮। খতমে নবুওয়াতের আদর্শে ছুরিকাঘাতকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সব সময় ইসলাম বিদ্বেষী ও ইসলামের বিনাশকামী শক্তির মিত্র হিসেবে প্রকাশ্যে ও গোপনে সক্রিয় থাকা। ইসলামবিনাশী কর্মকা- থেকে তাদের রুখে দেয়ার প্রয়োজনে অবিলম্বে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে তাদের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা এবং নিষিদ্ধ করতে হবে তাদের সব প্রচারণা ও প্রকাশনা। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে তাদের জন্য ইসলাম ধর্মীয় পরিভাষার ব্যবহার। আর সর্বাত্মকভাবে তাদের পণ্য (প্রাণ, আরএফএল, সিজান) বর্জন করতে হবে।
৯। এই দেশে বাছ-বিচারহীনভাবে পৌত্তলিক সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এজন্যই মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
১০। এই মহাসমাবেশ এদেশের সব আইন ও নীতির ক্ষেত্রে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান পরিহারের জোরালো আহ্বান রাখছে। এ কারণেই ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও ইসলাম বিরোধী নারীনীতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে ঘোষণা করছে যে, শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১১। এদেশের স্বাধীন ও খালিছ ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র কাওমী মাদরাসাগুলোকে স্বাধীনভাবে দ্বীনি খেদমত করে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাই সারাদেশের কাওমী মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক, উলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম খতিবকে হুমকি, ধমকি ও ভয়ভীতি দান বন্ধ করাসহ তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১২। এই সমাবেশ কঠোরভাবে ইসলামের প্রতীক এবং ইসলামের চিহ্ন ও চরিত্র নিয়ে বিদ্রুপ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার সব রকম তৎপরতার নিন্দা করছে। একই সঙ্গে ঘোষণা করছে যে, রেডিও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি কালচার নিয়ে হাসি ঠাট্টা এবং নাটক সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১৩। মুসলিম প্রধান এই দেশে সব রকম ষড়যন্ত্রমূলক ধর্মান্তরকরণ ও মিশনারী তৎপরতা, জাতিসত্ত্বা ধ্বংস ও দেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে। তাই মহাসমাবেশ ঘোষণা করছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত এনজিওগুলোর অপতৎপরতা এবং খ্রিষ্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

———————————————–

হেফাজতের বক্তব্য যাই-ই হোকআমরা দেশকে দেশের আপামোর জনসাধারণের চাহিদার সাথে মিল রেখে জনগনের চাহিদামত দেশ পরিচালনা করতে পারছি না। এদেশে একটি মধ্যপন্থী গণতন্ত্রমনা সরকার দরকার। যে সরকার কারো প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না, জনগণের আশা-আকাংখার সাথে সাংঘর্ষিক কোন কাজ করবে না। তালে এদেশে হেফাজত বা জামাতের মত ডানপন্থীদল বা দেশে প্রচলিত বামপন্থী দল কখনও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এদেশের মানুষ মধ্যমপন্থা পছন্দ করে। কোন চরমপন্থা পছন্দ করে না। সরকার মধ্যমপন্থা অবলম্বন করলে অন্যরা জনসমর্থন পাবে না। এমনই একটি সরকার দরকার এদেশে। দুটি বৃহত্তর দলের কোনটিই কি পারে না এমনটি হবত?


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)