বেঞ্চমার্ক মুহাম্মদ (স):

 বেঞ্চমার্ক মুহাম্মদ (স):। লাইফ ইজ বিউটিফুল। ট্রাই করেই দেখুন না। প্লিজ!

জন্মের আগেই তিনি বাবাকে হারান। মা ও চলে যান ৬ বছর হতে না হতে। শেষ সম্বল দাদাও ওপারে পাড়ি জমান ৮ম বছরে। দরিদ্র চাচার ঘরে শেষ আশ্রয়। একই কস্ট যাদের বুকে আছে তারা এভাবে ভাবতে পারেন যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির শুরুটা এমনই ছিল। এতটাই শুন্য। সমাজের এমনতর শিশুটির প্রতি হাতটা বাড়িয়ে দিন। হয়তো সে ও বড় কিছু হবে। চাচা হলে পরম মমতায় কোলে নিন অনাথ ভ্রাতুস্পুত্র/ত্রীটিকে। তার জমি-জমা কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত্ বাদ দিন।

তিনি শুয়ে বসে চাচার ঘরে খাননি। একপাল ছাগল/দুম্বা চড়াতেন। হেল্প করতেন নানানভাবে। সিরিয়ার দিকে ও হজের সময় চাচার ব্যবসায় লেগে গেছেন কৈশোরেই। আমাদের কৈশোরও অল্প-বিস্তর এমনটি হতে পারে। মাকে একটু হেল্প। বাবার আয়ের সাথে দুটো টাকার যোগ। জগতটাকে চেনা। হতে পারে ক্ষুদ্র ব্যবসা বা চাকরী। যখন যেখানে যেভাবে পারা যায়।

কৈশোরেই ছেলেটি আল-আমিন উপাধি পেয়ে যায় পাড়ার লোকদের কাছে। তজ্জন্য নবী বা রাসুল হবার দরকার পড়েনি। স্কুল-গামী কিশোরিদের শিষ দেয়া বা নিছক বোকা সোকা ভাল ছাত্র হবার চেয়ে Active ভাল ছেলে- সৎ, সাহসি হিসেবে নাম ফুটলে দোষ কি?

বিশিস্ট ব্যবসায়ী খাদিজার ব্যবসায়িক ফার্মে ম্যনেজার হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি অল্প সময়েই সৎ, দক্ষ, ব্রিলিয়ান্ট অফিসার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান।পরে খাদিজা (র) সমস্ত ব্যবসার দায়িত্বই তাকে দিয়ে দেন। এমনকি জীবনাটাও একসাথে কাটানোর প্রস্তাব পাঠান। আমরা যারা অন্যের ব্যবসা প্রতিস্টানে কাজ করছি তাদের কাছে এর চেয়ে ভালো Example কি হতে পারে?

ব্যবসার মালিকানা হাতে পেলে তিনি হলেন Employer. জগৎবাসীর কাছে এর চেয়ে ভাল বস্‌ আর কে হতে পারে? আমরা যারা বস্‌ আছি তারা অনায়াসেই মুহাম্মদ (স) কে ভালো বসের উপমা হিসেবে নিতে পারি। পরবতীকালে উনার রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে উনি কেমন নেতা ছিলেন তাও আমরা জানি। ফালতু কথা, মিথ্যাচার, বেইনসাফি, বেঈমানির নেতাগিরির কালচারটা বাদ দিয়ে আমরাতো তাঁর মত নেতা হতে পারি। যে পার্টিই হোকনা কেন। অন্তত: কর্মিদের কাছে।

তিনি ছিলেন স্বামী, পিতা, দাদা, চাচা সবই। কেমন আচরণ করেছেন আত্নীয়কুলের সাথে। দুধ-মা হালিমা বা দুধভাইর সাথে। আমরা কেমন করি? মেকিভ্দ্রতার খোলস ছেড়ে আমরা চাইলে তেমন হতে পারি।

তিনি অনেকের প্রতিবেশি ছিলেন। দূর কোন বনবাদাড়ে থাকতেন না। ঢাকা শহরে আমার প্রতিবেশিরা কেমন আছে? তারা কি খায়? গ্রামান্চলের প্রতিবেশি সম্পর্কই বা কেমন? রেষারেষির অনল বা আধহাত সীমানা গন্ডগোলের চক্র থেকে চাইলে আমরা বেরুতে পারি। মনটা ভাল থাকবে।

তিনি মেহমান হতেন। তবে অল্প সময়ের জন্য। বে আক্কেলের মত দিনের পর দিন আত্নী্য় বাড়িতে পড়ে থাকতেননা। গৃহকর্তার সামর্থ্যমত আপ্যায়নে পরমতৃপ্ত হতেন। ‘বোরহানি বা ডিম ছিলনা’ বলতে বলতে বিয়েবাড়ি ত্যাগের ঘৃন্যতা ছিলনা উনার মধ্যে। আসুন আমরা তেমন হই।

মেহমান আসত তার কাছে। প্রায়ই। এমনকি রাতে বিছানা নস্টকরে চলে যাওয়ার রেকর্ডও আছে। রাগ করেননি। কৃত্রিম হাসি দাতে চেপে ‘খেয়ে গেলে ভাল হতোনা’ ধরনের ভন্ডামি করেন নি। ধনী আর দরিদ্র ভেদে বিহেভ করেননি। আসুন বিষয়টা শোধরাই।

মুসলিম ছাড়াও ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক নানাবিধ অনুসারিদের সাথে তিনি চলাফেরা, উঠাবসা, লেনদেন করেছেন। কারও বিন্দুমাত্র সম্পদ লুট করেন নি। মানুষের অধিকারের প্রতি চরমতর শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। হিন্দুর জমি, বসত ভিটা, দোকান লুট করে যেসব মুসলিম ‘লেকচার’ দেন তাদেরজন্য ডাবলঘৃনা। এমনকি ভিন ধর্মানুসারীদের নুন্যতম ‘হেয়’ চোখে দেখাও ঘোরতর অপরাধ।

মুহাম্মদ (স) সৈনিক, সেনাপতি, রাজনৈতিক, বিরোধিদলীয় নেতা, সরকার প্রধান, রাস্ট্রপ্রতি, ইমাম, মুসল্লি, পথচারী, কয়েদি, জেলার, লোনদাতা, লোনগ্রহীতা, বক্তা, শ্রোতা অসংখ্য চরিত্রে ‘অভিনয়’ করেছেন। ধনাঢ্যতা, দারিদ্র্য, নিপিড়ীত, ক্ষমতাবান সব ধরনের সময় পেয়েছেন। আমরাও এর কোন একটি সময় বা চরিত্র পার করছি।

অনুসরন করতে চাইলে পুরোটাই তার কাছে পাওয়া যাবে। কেননা মুহাম্মদ (স) পেশাদার কোন নান, পাদ্রী, মাওলানা, ঠাকুর, পীর, দরবেশ ছিলেননা, তিনি ছিলেন হাজারো মানুষের মাঝে, আমাদের মত সুখে কিবা দুখে, শৈশবে, যৌবনে এবং বাধর্ক্যে। সদা। ফলো করলে শান্তি পাবেন।
পাললিক মন / ১০ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৯


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)