দেশে সফটওয়্যার খাতে ১০ কোটি ডলার আয়!

দেশের সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতে রপ্তানি আয় ১০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ সফলতার খবর জানাতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে একটি বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৩১.০৮.২০১৩ তারিখে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব নজরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি ফাহিম মাশরুর।অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শামীম আহসান, সহ-সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, মহাসচিব রাসেল টি আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব এম রাশিদুল হাসান, কোষাধ্যক্ষ উত্তম কুমার পাল, পরিচালক রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ, নাভিদুল হক, প্রাক্তন সভাপতি এ তৌহিদ, সরোয়ার আলম, রফিকুল ইসলাম রাউলি এবং হাবিবুল্লাহ এন করিম।

এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এবারই প্রথম আইসিটি খাতে রপ্তানি আয় ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত কবছরে সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৫০ ভাগ। এ প্রবৃদ্ধি রপ্তানিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০টি খাতের অন্যতম।

প্রসঙ্গত, ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বিগত বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪৩.৫৩ ভাগ। দেশের আইসিটি খাতে এটি যুগান্তকারী অর্জন।

ফাহিম মাশরুর বলেন, আইসিটিতে রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এ খাতে ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। সম্মিলিত উদ্যোগ আর পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন নয়।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার বিক্রি করে গত বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। আইসিটিতে এ আয়ে অবকাঠামোগত খরচ অন্য যেকোন খাতের তুলনায় খুবই কম। আমাদের তরুণরা বলতে গেলে একটা পিসি/ল্যাপ্টপ আর একটা ব্রডব্যান্ড / জুম বা এ ধরণের একটি সংযোগ নিয়ে নিজের পড়ার ঘরে বা ছোট্ট একটা অফিসে বসেই এই আয় করছে। হরতাল, অবরোধ, জানযট,বৃষ্টি-বাদল কোন কিছুই এদের থামাতে পারছে না। এরা যেখানে বসে কাজ করে সেখানেই তাদের অফিস।

বিস্তারিত জানতে সার্চ করুনঃ
৩০ হাজার জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রযুক্তিখাতে নতুন প্রকল্প:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাবলিক সেক্টর আধুনিকায়নের জন্য উপযুক্ত মান ও নির্দেশাবলী প্রস্তুত করার পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের জন্য ৩০ হাজার জনবল তৈরি করা, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পকে বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের মাধ্যমে এ খাতকে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্য করা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে উপযুক্ত পলিসি, আইন ও নীতিমালা তৈরি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প প্রণয়ন করেছে সরকার। প্রকল্পটি নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫৭২ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে ১৮ই এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা ও উপার্জন কর্মসূচির অধীনে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হবে। এসব উদ্যোক্তা তৈরিতে লজিস্টিক সমর্থন দেয়া হবে যাতে করে তারা একটি গ্র”প তৈরি এবং আউটসোর্সিংয়ের জন্য আরও ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে পারে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জেলায় জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, যারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখবে।

ইন্টারনেটের এই যুগে আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থানের বড় খাত হয়ে উঠছে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্ধলক্ষাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী অনলাইনে বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এছাড়া দেশের প্রায় দুই লাখ তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসঃ ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সার, ইল্যান্সঃ সহ জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য কাজ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। ওডেস্কে প্রায় সব সময়ই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যাটাগরিতে ১০ হাজারের অধিক জব থাকে। ইল্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের। প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে শত শত কাজ। ওডেস্কে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ ডলারের বেশি রেটে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করছেন এমন অনেকেই রয়েছেন।
তবে এ আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে কতটা দক্ষ করতে পারছেন, তার ওপর। একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপার অবশ্যই এইচটিএমএল, সিএসএস, পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকোয়ারি, মাইএসকিউএলসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ভালোভাবে শিখে কোটি কোটি ডলারের ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বাজারে প্রবেশ করতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনার:
গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের অভাব হয় না। প্রমোশনাল ডিসপ্লে¬, জার্নাল, করপোরেট রিপোর্ট, মার্কেটিং ব্রোশিউর, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইনসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজের চাহিদা রয়েছে।
একজন ডিজাইনার প্রতি বছরে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা এ সম্পর্কিত চাকরি বা কাজ করে এক লাখ ডলার আয় করতে পারেন। সেই হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনে ডিপ্লোমাধারীর বেতন মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে ব্যাচেলর ফাইন আর্টসে ডিগ্রিধারীদের বেতন মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা হতে পারে।

বিস্তারিত জানতে সার্চ করুনঃ  “বছরে ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব”
তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রফতানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তারপরও ১০ কোটি ডলার আয় করতে ৫ বছরেরও বেশি লেগে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে সফটওয়্যার অল্প সময়ের মধ্যেই এ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এজন্য এটা নিয়ে সরকারকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
তথ্য-প্রযুক্তি এবং এ সংশিষ্ট সহায়ক সেবা খাত ইতিমধ্যে দেশের শীর্ষ ১৫টি রফতানি খাতের একটিতে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে এ খাতের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রফতানি করছে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে জুলাই-মে মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে গড়ে ৮৪ লাখ ১১ হাজার ডলার করে রফতানি আয় হয়েছে।

আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ খাত থেকে ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। এজন্য ফ্রি-লেন্সারসহ লক্ষাধিক যুবক এখানে কাজ করে যাচ্ছে।
রফতানির ক্ষেত্রে শীর্ষ দশটি দেশ হল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ভারত, জাপান ও আরব আমিরাত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয় প্রায় ৬৮ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৩২ শতাংশ।
দেশে ১৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এ খাতের রফতানি সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান একশ শতাংশ রফতানিনির্ভর।

বিস্তারিত জানতে সার্চ করুনঃ  “ফ্রিল্যান্সে স্বাবলম্বী হচ্ছেন উচ্চ শিক্ষিত তরুণরা”
মুক্ত পেশা বা ফ্রিল্যান্স কাজ করার প্রতি তরুণরা ঝুঁকছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দিনে এক কোটি টাকা আয় করছেন তারা। চলতি বছরে এ আয়ের পরিমাণ দৈনিক দুই কোটি টাকা স্পর্শ করবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এ খাত থেকে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছেন ফ্রিল্যান্সাররা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্ববাজারে শীর্ষ তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছেন।
আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বা গ্লোবাল মার্কেট প্লেস হলো ওডেস্ক (www.odesk.com). এছাড়া দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের দুটি সাধারণ ফোরাম হলো ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এবং ফ্রিল্যান্সফেস্ট (FreelanceFest.com). এ দুই প্রতিষ্ঠান সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার তরুণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইন আউটসোর্সিং করছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েও অনেকে এ পেশা গ্রহণ করছেন। তবে ফ্রিল্যান্সারদের অনেকেই কিছুদিন কাজ করে আর অনলাইন আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত থাকেন না। ২০১২ সালে দেশে প্রায় ১৪ হাজার ফ্রিল্যান্সার এ পেশায় নিয়মিত যুক্ত ছিলেন। চলতি বছরে তা আরো বেড়েছে।

১০ লাখ আইটি ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) প্রফেশনাল তৈরির লক্ষ্যে তিন সদস্যের বেসিস প্রতিনিধিদল সভাপতি শামীম আহসানের নেতৃত্বে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ কেসিএমজি’র সঙ্গে ঢাকাস্থ ব্র্যাক প্রধান কার্যালয়ে দেখা করেন। বেসিস সভাপতি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ আইটি ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) প্রফেশনাল তৈরি এবং ১০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানান।প্রশিক্ষণ প্রদানের এ প্রকল্পে বেসিসকে সব ধরনের সহায়তা করবে ব্র্যাক।

বিস্তারিত জানতে সার্চ করুনঃ    “১০ লাখ আইটি প্রফেশনাল তৈরিতে ব্র্যাক-বেসিস”

বিস্তারিত জানতে Search it into Google :

আউটসোর্সিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে

দেশে অনলাইনে কর্মসংস্থান এবং আউটসোর্সিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ জনবলের সংকট মেটাতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ লক্ষ্য পূরণে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ২০ হাজার আইসিটি গ্রাজুয়েট এবং ১০ হাজার সায়েন্স গ্রাজুয়েটকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশীয় ও বিশ্ব বাজারে যোগ্য ও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিশেষ এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


Leave a comment...

You need to login before submit comment. | Check the box to save Password (Uncheck if on a shared computer)